খাওয়া এবং ব্যায়াম দুজনে অন্যের পরিপূরক। নিয়মিত শরীরচর্চা বা কোনো কম্পেটিশনের ওপর নির্ভর করে আপনার খাদ্য তালিকা স্থির করা উচিত। আপনি কখন খাচ্ছেন এবং কি খাচ্ছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নিয়মিত শরীরচর্চার খাবার এক ধরণের হয় আবার সেই খাবার পরিবর্তন হয়ে যায় যদি আপনি কোনো প্রতিযোগিতায় যান বা অন্য কোনো কাজে যান। খাবার শরীরচর্চার আগে এবং পরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
একটি স্বাস্থ্যকর প্রাতঃরাশ খান
আপনি যদি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই শরীরচর্চা করেন, তাহলে শরীরচর্চা করার অন্ততঃ ১ ঘন্টা আগে আপনার প্রাতঃরাশ সেরে ফেলুন। ওয়ার্কআউট করতে যাবার আগে নিজের শরীরকে ভালো মতো পুষ্টি দিন। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অনুশীলনের আগে কার্বোহাইড্রেট খাওয়া বা পান করা ওয়ার্কআউট কর্মক্ষমতাকে উন্নত করতে পারে এবং আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে এনার্জি দেয় বা আরো বেশি মাত্রায় অনুশীলন করার ক্ষমতা যোগায়। আপনি যদি শরীরচর্চা করতে যাবার আগে না খান, তবে আপনি অনুশীলন করার সময় আপনি ক্লান্ত হয়ে যেতে পারেন বা আপনার মাথা ঘুরতে পারে এবং আপনি অচৈতন্য হয়ে পরে যেতে পারেন।
আপনি যদি প্রাতঃরাশের পরে এক ঘন্টার মতো শরীরচর্চা করেন, তবে হালকা প্রাতঃরাশ খান বা স্পোর্টস ড্রিঙ্কের মতো কিছু পান করুন. বেশি এনার্জির জন্য কার্বোহাইড্রেটগুলিতে ফোকাস করুন বা কাজুবাদাম ,আলমন্ড, ওয়ালনাট, বা কোনো ড্রাইফ্রুইটস খেতে পারেন।
জিম বা ওয়ার্কআউট করার আগে কি খাওয়া উচিত ?
প্রাতঃরাশে ব্যায়ামের আগে খাদ্য তালিকায় অবশ্যই এই জিনিস গুলো রাখবেন
- পুরো শস্যের সিরিয়ালস বা রুটি
- কম চর্বিযুক্ত দুধ
- ফলের রস
- একটি কলা
- দই
এছাড়া মনে রাখবেন, যদি আপনার সাধারণত সকালে কফি পান করার অভ্যাস থাকে তবে আপনার ওয়ার্কআউটের আগে এক কাপ সম্ভবত ঠিক আছে। এছাড়াও জেনে রাখুন যে,কোনও নতুন খাবার বা পানীয় যদি প্রথম বারের মতো আপনি ঠিক জিম করার আগে গ্রহণ করেন তাহলে কিন্তু আপনার পেট খারাপের সমস্যা তৈরী হতে পারে। যেকোনো নতুন খাবার কখনোই শরীর চর্চা করার আগে খাবেন না।
আগে আপনার শরীরের পাকস্থলী কে বুঝতে দিন প্রথমে যে খাবার টি আপনি খাচ্ছেন , সেটি লিভার নিতে পারবে কিনা ,সেই জন্য দিনের যেকোনো সময়ে প্রথম বারের মতো খাবারটিকে টেস্ট করুন কিন্তু জিম করার আগে করবেন না। যদি আপনার পাকস্থলী সহজেই সেই খাবার টিকে হজম করে নিতে পারে জানবেন আপনার খবর টি নিয়ে কোনো অসুবিধা আর হবে না ,এবার আপনি সেটিকে পরে জিমের আগে খেতে পারেন কিন্তু মনে রাখবেন খাবারটিতে যেন উপযুক্ত পরিমানে কার্বোহাইড্রেট থাকে।
জিম করার সময় নির্ধারণ করে খাবার গ্রহণ করুন
আপনি কখন জিম করতে যাচ্ছেন সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি অতিরিক্ত খাবার খেয়ে জিমে চলে যান ,আপনার কষ্টের ফল মারাত্মক হতে পারে।
বেশি খাবার
আপনি যদি খাবার গ্রহণ করার ৩-৪ ঘন্টা পর জিম করতে যান তাহলে বেশি পরিমান খাবার খান ,কোনো অসুবিধা হবে না। কারণ ৩-৪ ঘন্টার মধ্যে আপনার পাকস্থলী খাবার হজম করে ফেলবে।
কম খাবার
অপি যদি খাবার গ্রহণ করার ১-২ ঘন্টার মধ্যে জিমে যান তাহলে খাবারের পরিমান অল্প এবং সীমিত রাখুন এতে আপনার পেট খালি থাকবে এবং জিম করতে অসুবিধাও হবে না ,বেশি খাবার পেতে গেলে হজম করতে সময় দিতে হবে ,তা নাহলে এর ফল হবে মারাত্মক। তাছাড়া বেশি খাবার পেতে গেলে সারির অলস লাগবে ,এবং ঘুম পেতে শুরু করবে।
সকালে ব্যায়াম করার আগে কি খাওয়া উচিত?|জিম করার আগে এবং পরে কি খাওয়া উচিত
ব্যায়ামের ঠিক আগে এবং ব্যায়াম করার সময় ছোট স্ন্যাকস খেতে পারেন। মূল বিষয় হল আপনি কেমন অনুভব করছেন তার ওপর নির্ভর করে স্নাক্স খেতে পারেন । আপনার জন্য ভাল কাজ করে কি না সেটাও নিজে আপনি আগে যাচাই করে দেখুন ।যদি আপনি ৬০ মিনিটের কম সময় ব্যায়াম করেন তাহলে কোনো এনার্জি বার বা স্নাক্স আপনাকে কোনো অতিরিক্ত শক্তি দিলেও আপনি বুঝতে পারবেন না, কিন্তু আপনার খিদে হয়তো মিটতে পারে এটা খেলে। যদি আপনি স্ন্যাকসের শক্তি বুঝতে চান, তাহলে আপনাকে একটু বেশি সময় ধরে ব্যায়াম করতে হবে । আপনার ওয়ার্কআউট 60 মিনিটের বেশি হলে, আপনি ওয়ার্কআউটের সময় কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার বা পানীয় খেলে উপকৃত হতে পারেন। ভাল জলখাবার গুলির মধ্যে এগুলি খুব ভালো হতে পারে:
- একটি এনার্জি বার
- একটি কলা, একটি আপেল বা অন্যান্য তাজা ফল
- দই
- একটি ফলের স্মুদি
- একটি সম্পূর্ণ শস্য ব্যাগেল বা ক্র্যাকার
- একটি কম চর্বিযুক্ত গ্রানোলা বার
- একটি চিনাবাদাম মাখন স্যান্ডউইচ
- স্পোর্টস ড্রিংক বা ফলের পাতলা রস
- একটি স্বাস্থ্যকর প্রাতঃরাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যদি ,আপনি খাবারের কয়েক ঘন্টা পরে একটি ওয়ার্কআউট পরিকল্পনা করেন।
ব্যায়াম করার পর খাদ্য তালিকা
ব্যায়াম করার পর আপনার শরীরের পেশীগুলিকে আবার শক্তি প্রদান করবার জন্য এবং তাদের গ্লাইকোজেন স্টোর প্রতিস্থাপন করতে, আপনার ব্যায়াম সেশনের দুই ঘন্টার মধ্যে একটি খাবার খান যাতে কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন উভয়ই থাকে। আপনার দুপুরের লাঞ্চের সময় যদি দুই ঘন্টা দেরি হয়,তাহলে ছোট জলখাবার হিসাবে জিম করার পরে নিচের খাবার গুলির মধ্যে বেঁচে নিতে পারেন। ওয়ার্কআউট-পরবর্তী ভালো খাবারের পছন্দের মধ্যে রয়েছে:
- দই এবং ফল
- পিনাট বাটার স্যান্ডউইচ
- কম চর্বিযুক্ত চকোলেট দুধ এবং প্রিটজেল
- পোস্ট-ওয়ার্কআউট পুনরুদ্ধার স্মুদি
- সবজি সঙ্গে পুরো শস্য রুটি উপর প্রোটিনযুক্ত চিকেন বা মাটন
তরল পানীয় রস খান
তরল জাতীয় পান করতে ভুলবেন না। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সাহায্য করার জন্য ব্যায়ামের আগে, সময় এবং পরে আপনার পর্যাপ্ত তরল প্রয়োজন।
ব্যায়ামের সময় ভাল হাইড্রেটেড থাকার জন্য, আমেরিকান কলেজ অফ স্পোর্টস মেডিসিন সুপারিশ করে যে আপনি:
- আপনার ওয়ার্কআউটের ২ থেকে ৩ ঘন্টা আগে মোটামুটি 2 থেকে 3 কাপ (৪৭৩ থেকে ৭১০ মিলিলিটার) জল পান করুন।
আপনার ওয়ার্কআউটের সময় প্রতি ১৫ থেকে ২০ মিনিটে প্রায় ১ /২ থেকে ১ কাপ (১১৮ থেকে ২৩৭ মিলিলিটার) জল পান করুন। আপনার শরীরের আকার এবং আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে জল পান করুন। - ওয়ার্কআউটের সময় আপনার শরীরের ওজন কমতে থাকে ,সেটিকে পুনরায় ফিরে পেতে প্রতিটি পাউন্ড (0.৫ কিলোগ্রাম) ওজনের জন্য আপনার ওয়ার্কআউটের পরে মোটামুটি ২ থেকে ৩ কাপ (৪৭৩ থেকে ৭১০ মিলিলিটার) জল পান করুন।
- জল সাধারণত শরীর থেকে রক্তের মধ্যে থাকা ফ্লুইডগুলি যেগুলো ঘামের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে যায়, সেটিকে পুনরায় ফিরে পেতে সাহায্য করে। কিন্তু আপনি যদি ৬০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ব্যায়াম করেন, তাহলে স্পোর্টস ড্রিঙ্ক ব্যবহার করুন। স্পোর্টস ড্রিংকস আপনার শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং আপনাকে একটু বেশি শক্তি দিতে পারে কারণ এতে উপযুক্ত পরিমানে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা শক্তির উৎস হিসাবে কাজ করে।
মনে রাখবেন যে, আপনার ক্ষমতা এবং ওয়ার্কআউট করার সময় নির্ভর করবে যে আপনি কত ঘন ঘন কী খাবেন এবং পান করবেন। উদাহরণস্বরূপ, কয়েক মাইল ম্যারাথন রেস দৌড়ানোর জন্য কয়েক কিলোমিটার হাঁটার থেকে আপনার বেশি পরিমানে শক্তির এবং তীব্রতার প্রয়োজন হবে। এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্রীড়া ইভেন্টের আগে আপনার খাবারে নতুন ভাবে কোনো কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার যুক্ত করবেন না কারণ আপনার শরীরের সিস্টেম নতুন কোনো খাবার পেলে কিভাবে কাজ করবে আপনি প্রথম বারেই বুঝতে পারবেন না ,যদি না আপনার পূর্বের অভিজ্ঞতা থাকে।