Pearl Farming Business:বিহারের এই যুবক কে চিনে নিন,চাকরি ছেড়ে মুক্তো চাষ করে লাখোপতি হয়েছেন
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সেই গতানুগতিক ৯-৫টার চাকরির থেকে নিজের একটি স্বাধীন ব্যবসা করাকে বেশি পছন্দ করেন। তাদের ব্যাবসার প্রতি ক্রেজ ও অনেক বেশি। আর দেখা গেছে যে নতুন ব্যবসা শুরু করে মানুষ বেশ সফলতা অর্জন করেছে।
আপনিও যদি নিজের নতুন ব্যবসা শুরু করবেন মনে করছেন তবে আপনারা এই ব্যক্তির সাফল্যের কথা শুনুন।যেটি দেখলে আপনারা অনুপ্রাণিত হবেন। সেই ব্যক্তি হলেন বিহারের পশ্চিম চম্পারণের কৃষক পরিবারের সন্তান। তার নাম হলো নীতিল ভরদ্বাজ। নীতিলের বাবাও ছিলেন পেশায় একজন কৃষক। নীতিল তার মোটা অংকের চাকরি ছেড়ে এই কৃষিকাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। আর এখন তিনি সেই কৃষিকাজ করে বছরে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। আসুন আরো জেনে নি এই নীতিলের সম্পর্কে।
কিভাবে তিনি এই মুক্ত চাষ করার বিষয়ে জানলেন?
এই সম্পর্কে নীতিল জানায় যে ২০১৭ সালে যখন সে শহর থেকে গ্রামে ফেরে তখন একদিন তার বাবা পত্রিকার মাধ্যমে এই মুক্ত চাষের বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন। যেহেতু নীতিলের বাবাও পেশায় একজন কৃষক ছিলেন তিনি এই বিষয়ে অর্থাৎ মুক্তো চাষ পদ্ধতি বিষয়ে সমস্ত তথ্য জানেন এবং সেগুলি তার ছেলের সঙ্গে শেয়ার করেন। নীতিল যখন এই বিষয়ে জানতে পারেন তখন তার এই চাষের আইডিয়া টি খুব পছন্দ হয় এবং তখনই তিনি মুক্ত চাষের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর থেকে নীতিল বিভিন্ন জায়গা থেকে এই চাষের জন্য নলেজ নিতে শুরুও করেন।
মুক্ত চাষ সম্পর্কে জানতে গিয়ে নীতিল একদিন জানতে পারেন যে এই চাষ করার জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। এই চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় মধ্যপ্রদেশের হোসাঙ্গাবাদে। নীতিল এই চাষ করার জন্য এতো পরিমানে উৎসাহী ছিলেন যে তিনি তার চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে মধ্যপ্রদেশ চলে যান এই মুক্ত চাষের শিক্ষা নিতে। সেখান থেকে তিনি মুক্ত চাষ সম্পর্কে জেনে এসে নিজের গ্রামে ফিরে আসেন।
কিন্তু চাকরি ও চাষ দুটি জিনিস একসঙ্গে করা নীতিলের পক্ষে করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ছিলো। সেই অবস্থায় তিনি তার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ২০১৯ সালে তার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি তার গ্রামে ফিরে আসেন মুক্ত চাষ করার জন্য। মুক্ত চাষ করার জমির জন্য আসেন।
যেহেতু মুক্ত চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান জলের প্রয়োজন হয় সেই জন্য তিনি এক একর জমিতে একটি পুকুর খনন করেছিলেন। এই কাজ করার জন্য তিনি সরকারের থেকে৫০% ভর্তুকিও পান। তারপর তিনি চেন্নাই থেকে ৫০০ টি ঝিনুক কিনে জেনে পুকুরে লাগান। প্রথমবার তিনি এই ব্যাবসায় ২৫,০০০ টাকা লাগিয়েই ৭৫,০০০ টাকা লাভ করেছিলেন। প্রথম বারেই তিনি বড়ো সফলতা অর্জন করেন। প্রথমবার এই সফলতা অর্জনের পর তিনি তার এই মুক্ত চাষের পরিধিও বৃদ্ধি করেন। এর ফলে তার আয় ও বাড়ে সঙ্গে আত্মবিশ্বাস। এরপর তিনি ৫০০ টাকার বদলে ২৫ হাজার টাকার ঝিনুক কেনেন এবং তা পুকুরে লাগান এবং দ্বিগুন আয়ের ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও তিনি মাছ চাষ ও শুরু করেন।
পুকুরে মুক্তা চাষ পদ্ধতি :-
মুক্ত চাষের জন্য প্রশিক্ষণ,পুকুর এবং ঝিনুকের প্রয়োজন হয়। নীতিল জানায় এছাড়া পুকুর খননের জন্য সরকার থেকে ভর্তুকিও পাওয়া যায়। যদিও দেশের অনেক রাজ্যে সহজেই ঝিনুক পাওয়া যায় ,বিহার ও দক্ষিণ ভারতের দাঁড়ভাঙ্গায় ভালো গুণগত মানের ঝিনুক পাওয়া যায়। নীতিল জানান অনেকেই ভাবেন কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই এই মুক্ত চাষ করা যায়,কিন্তু ঝিনুকের চিকিৎসা,পরিচর্চা এই সমস্ত কাজের জন্য ভালো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তাই ভালো আয় ও ফলন পাওয়ার জন্য ভালো প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তার পরই মুক্ত চাষ করা সম্ভব।
নীতিল জানায় যে একটি ঝিনুক তৈরী করতে ৩০-৩৫ টাকা খরচ হয়। তারপর সেই ঝিনুক থেকে দুটি মুক্ত তৈরী হয়। একটি মুক্তার দাম প্রায় ১২০ টাকা। গুণগত মান ভালো হলে এর বাজার দাম ২০০ টাকার ও বেশি হয়। আপনি যদি ৮ লক্ষ টাকা খরচ করে ২৫০০০ ঝিনুক কিনে নেন তার মধ্যে ৫০% ঝিনুক ভালো হবে। এর ফলে বছরে আপনি ৩০ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন।
নীতিল লকডাউন এর সময় মানুষকে এই মুক্ত চাষ করার প্রশিক্ষণ দেন। তিনি বেকারদের প্রশিক্ষনদিয়ে কাজ পেতে সহায়তা করেছিলেন covid পরিস্থিতিতে। এখন নীতিলের সাথে ৬ জন কর্মী কাজ করেন এবং তিনি তাদের মাসে ৭০০০ টাকা মাইনে দেন।