আমাদের দেশের বেশির ভাগ গ্রামই এতই সুন্দর যে দেখতে তুলি দিয়ে আঁকা। অনেক পর্যটক আছে যারা শুধু গ্রাম দেখার জন্য পায়ে হেঁটে যাতায়াত করে। একেক গ্রামের জীবনধারা একেক রকম। বর্তমানে এরকম অনেক গ্রামে ছোট ছোট পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য হোম স্টে, ছোট খাবার, স্থানীয় সংস্কৃতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবার আমাদের দেশের কিছু এমনও আছে যেখান থেকে দুই ধাপ এগোলেই অন্য দেশের সীমান্ত শুরু হয়ে যায়। উত্তর থেকে দক্ষিণে 3,000 কিলোমিটারেরও বেশি উপকূলরেখা, পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রায় 3,000 কিলোমিটার এবং দক্ষিণ উপকূলরেখার 7,000 কিলোমিটারেরও বেশি, ভারত একটি অনন্য ল্যান্ডমাস। দেশে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে অনেকে কোলাহল অপছন্দ করেন। আবার এমন জায়গা রয়েছে যেখানে সর্বদা শান্তি বিরাজ করে। যেমন ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্তে এই পাঁচটি গ্রাম। আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাঁটাতার ঘেঁষে অবস্থিত এসব এলাকায় প্রতি বছর পর্যটকরা আসেন। (সমস্ত ছবির ক্রেডিট: istock.com)
ছিটকুল তিব্বতের সীমান্তবর্তী একটি ছোট্ট গ্রাম। গ্রামটি হিমাচল প্রদেশের কিন্নর জেলায় অবস্থিত। এই গ্রামে মূলত কিন্নর আদিবাসীদের বাস। এই গ্রাম দিয়ে ব্যবসায়ীরা যাতায়াত করে। গ্রামে অনেক আপেল বাগান, পাহাড়ি তুষার মাটি এবং বাসপা নদী রয়েছে। খুব কম লোকই এই ছিটকুল গ্রামের খোঁজ খবর রাখেন। গ্রামটি খুবই শান্তিপূর্ণ।
গ্রামবাসীরা বেশ অতিথিপরায়ণ। গ্রামের লোকগান বেশ জনপ্রিয়। আপনি যখন সেই গ্রামে বেড়াতে যাবেন, তখন গ্রামের লোকেরা আপনাকে খোলা মনের সাথে আপ্যায়ন করবে এবং সেই সাথে আপনাকে গল্প বলবে যা আপনাকে ভাল অনুভব করবে। ভারতের শেষ ধাবা এই গ্রামেই। পর্যটকরা খাবার ও চায়ের জন্য ওই ধাবায় যান।
মোরেহ,মণিপুর(Moreh,Manipur):-
ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক করিডোর হল মণিপুরের মোরেহ গ্রাম। এটি ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত। মোরের শান্তিপূর্ণ গ্রামে বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি ভ্রমণকারীর অন্তত একবার এই সুন্দর গ্রামটি পরিদর্শন করা উচিত।
গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি রাস্তার পাশের দোকানে কেনাকাটা করাও দারুণ। এখানকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা বেশ আকর্ষণীয়। সেখানে কয়েকটা দিন কাটালে মন শান্ত হয়। মোর গ্রাম থেকে মায়ানমারের তামু শহরের দূরত্ব মাত্র ৫ কিমি।
তামিলনাড়ুর ধানুশকোডি শ্রীলঙ্কার সীমান্তের শেষ শহর। এটি ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত। ধানুশকোডি গ্রাম থেকে শ্রীলঙ্কার দূরত্ব মাত্র 20 কিমি। 1964 সালের ভয়ানক ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে এই এলাকায় বিশেষ মানুষ বসবাস করেনি। যারা থাকে তারা শান্তিতে থাকে। তামিলনাড়ুর এই ধানুশকোডি গ্রামটি শ্রীলঙ্কার তালাইমান্নার এবং পামবান সেতু দিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত।
ঝুলাঘাট, উত্তরাখণ্ড(Jhulaghat,Uttarakhand):-
উত্তরাখণ্ডের ঝুলাঘাট একটি প্রাকৃতিক আন্তর্জাতিক সীমান্ত দ্বারা বিভক্ত। ঝুলাঘাট নদী দ্বারা দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে ভারতের ঝুলাঘাট আর অন্যদিকে নেপালের ঝুলাঘাট। এই দুটি ঝুলাঘাট নদীর উপর একটি ঝুলন্ত সেতু দ্বারা সংযুক্ত। আর এই সেতুটি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। ঝুলাঘাট উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলায় অবস্থিত একটি ছোট শহর। স্থানটি নদী এবং উচ্চ হিমালয় শৃঙ্গ দ্বারা সজ্জিত। এই স্থানটি তীর্থযাত্রী এবং অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
তুর্তুক, লাদাখ(Turtuk Village,Ladakh):-
লাদাখের ছোট শহর তুর্তুক পাকিস্তানের গিলগিট-বেলুচিস্তান সীমান্তের কাছে। শহর না বলে গ্রাম বলাই ভালো। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর এই তুর্কু ভারতের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু লাদাখের এই গ্রামে সবসময় শান্তি বিরাজ করে।
গ্রামের মানুষ খুব সাধারণ জীবনযাপন করে। লাদাখের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, তেমনি এর ছোট্ট গ্রাম তুর্তুকের সৌন্দর্যও বর্ণনাতীত। বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময় গ্রামটিকে আশ্চর্যজনক দেখায়। শীতল পরিবেশে চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখার তুলনা হয় না।