Jagannath Dev’s Rath Yatra In Puri 2022:ভেসে আসা নিমকাঠ দিয়ে তৈরী হয় জগন্নাথের মূর্তি,মূর্তিটি সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণটি কি জানেন

এই বছর রথযাত্রা আগামী ১ জুলাই। আর রথযাত্রা মানেই লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে। এই দিন একটি আলাদাই উৎসব পালন করা হয় এই  পুরীর মন্দিরে। এই দিন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার জন্য তিনটি আলাদা রথের ব্যবস্থা করা হয়। এই তিনটি রথে করে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা তাদের মাসির বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। আমরা মোটামুটি দেখে এসেছি আমাদের দেশের বিভিন্ন দেব-দেবীরমূর্তি কোনো ধাতু,পাথর বা মাটি দিয়ে তৈরী। কিন্তু একমাত্র পুরীর মন্দিরে জগন্নাথ ,বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি কাঠের তৈরী। এবং আশ্চর্যের বিষয় এই মূর্তির কোনো হাত পা নেই। স্বাভাবিক মানুষের মনে প্রশ্ন আসে এই মূর্তির এরকম হওয়ার কারণ কি ?তাই এই সম্পর্কে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। আসুন জেনে নি সেই কাহিনী। 

স্বয়ং জগন্নাথের কাছ থেকে স্বপ্নাদেশ পান মালাবারের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন(Indradyumna)। তিনি নিজেই এই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নির্মাণ করেন। জগন্নাথ তাকে স্বপ্নে আদেশ দেন নীলাঞ্চল পর্বতের গুহা থেকে জগন্নাথের মূর্তিনীয়ে আসার। মালাবারের রাজার খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন ব্রাহ্মণ বিদ্যাপতি। তিনি জানতেন যে সেই গুহায় সেখান এক জাতি আছে যার নাম সবর জাতি,তারা  নীলমাধবের মূর্তি পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে রেখেছেন এবং তারা সেখানে পূজা করেন।সেখানে নীলমাধবের পূজা করতেন বিশ্ব বসু। তিনি ছিলেন সবর জাতির দলপতি পুরোহিত এবং তিনি নীলমাধবের পরম ভক্ত ছিলেন। বিদ্যাপতি ছলচাতুরির দ্বারা বিশ্ব বসুর কন্যাকে বিবাহ করেন এবং তার সাহায্যে নীলমাধবের মূর্তি সেই গুহা থেকে বার করে আনেন। 

এর পর জগন্নাথ আবার রাজাকে স্বপ্ন দেন যে তিনি সেই মূর্তি আবার যেন ওই পাহাড়ের গুহায় রেখে আসেন। রাজাকে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন তিনি রাজার কাছে অবশ্যই ফিরে আসবেন। তার পর থেকেই রাজা পুরীতে এই মন্দির স্থাপনা শুরু করে দেন। মন্দির তৈরী হওয়ার পর রাজা জগন্নাথ দেব কে তার ওই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য প্রার্থনা করেন। 

রাজা কে স্বপ্ন দিয়ে জগন্নাথ দেব বলেন, দ্বারকা থেকে একটি নিমকাঠের গুঁড়ি ভেসে ভেসে পুরীর সমুদ্রের পরে আসবে। সেই নিমকাঠ দিয়ে যেন তার মূর্তি তৈরী করা হয়। তার ঠিক পরেই পুরীর সমুদ্রে ভেসে আসে সেই নিমকাঠ। রাজার সমস্ত সৈন্যরা মিলেও সেই কাঠ সমুদ্রের পার থেকে ডাঙায় তুলে আনতে পারেনি। শেষে রাজা সবর জাতির দলপতি বিশ্ব বসুর কাছে সেই কাঠের গুঁড়িটিকে ডাঙায় তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রার্থনা নিয়ে যান। বিশ্ব বসু এক কাঁধে সেই কাঠটি তুলে নিয়ে যান ডাঙ্গাতে।

jagannath dev rath yatra

 

কাঠ তো এলো কিন্তু আরেক সমস্যা তৈরী হয় কে এবার এই মূর্তি তৈরী করবে ? বিশ্বকর্মা এক বৃদ্ধ কারিগরের রূপ ধরে আসেন রাজার কাছে। শর্ত ধরে তিনি এই মূর্তি তৈরী করতে প্রস্তুত হন। শর্তগুলি ছিল-

১)তিনি একাই এই জগন্নাথ দেবের মূর্তি তৈরী করবেন,তিনি কারোর সাহায্য নেবেন না।

২)এই মূর্তি যত দিন না তৈরী হবে মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকবে। 

৩)২১ দিনের মধ্যে এই মূর্তি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হবে,এই ২১ দিন কোনো রকম ভাবেই মন্দিরের দরজা খোলা যাবে না। 

বিশ্বকর্মার শর্ত মেনে নেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন। তার পর কাজ শুরু হয় জগন্নাথ দেবের মূর্তি গঠনের। কিন্তু রাজার স্ত্রী গুন্ডিচা দেবীর ক্রমশ আগ্রহ বাড়তে থাকে। সে মন্দিরের দরজায় কান পেতেও ভিতর থেকে কোনো শব্দ শুনতে পেতেন না। তার মনে হয়েছিল সেই বৃদ্ধ কারিগর হয়তো খুদা তৃষ্ণায় মারা গেছেন। তাই বাধ্য হয়ে রাজা আসেন এবং সেই মন্দিরের দরজা খোলেন। খোলার সাথে সাথে সেখান থেকে উধাও হয়ে যান বৃদ্ধ-রূপী কারিগর বিশ্বকর্মা। আর সেখানে তিনটি অসম্পূর্ণ মূর্তি দেখতে পান রাজা। জগন্নাথ ও বলরামের অর্ধেক হাত তৈরী হয়েছিল এবং সুভদ্রার হাত পা দুই হয়নি। তাই এটি জগন্নাথের ইচ্ছা মনে করে তিনি সেই অসম্পূর্ণ মূর্তি ই প্রতিষ্ঠা করেন তার সেই মন্দিরে।    

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *